একেবারে হৈ হৈ করে বাজারে এসে গেল রিলায়্যান্স জিও। টেলিকম ইন্ডাস্ট্রিতে রীতিমতো শোরগোল ফেলে মুকেশ অম্বানির ভাষায় রিলায়্যান্স শুরু করল ডেটাগিরি। ভয়েজ কল একেবারে ফ্রি করলেও সে দিকে যেন নজরই দিতে চাইছে না জিও। তারা জোর দিচ্ছে মূলত ডেটার উপর। মুকেশের নিজের কথায় গ্রাহক যত বেশি ডেটা ব্যবহার করবেন, ততই কমবে তাঁর খরচ। শুধুমাত্র দেশে নয়, বিশ্বের বাজারেও নাকি এর থেকে ভাল ট্যারিফ দিচ্ছে না কোনও টেলিকম সংস্থা। মুকেশের আরও দাবি, নেট পরিষেবার জন্য অন্যদের কাছে ১ জিবি ডেটা কিনতে হরেকরে ২৫০ টাকা খরচ পড়ে। জিও নাকি তা জোগাবে ৫০ টাকায়। বেশি ডেটা ব্যবহার করলে তা নেমে আসতে পারে ২৫ টাকাতেও!
জিও বাজারে আসতেই হুড়মুড় করে নামতে শুরু করেছে বাকি টেলিকম সংস্থাগুলির শেয়ারদর। জিওর সিম নিতে পড়ছে লম্বা লাইন। বাজারে টিঁকে থাকতে বিভিন্ন অফার দিচ্ছে অন্য টেলিকম সংস্থাগুলিও। কিন্তু ঠিক কতটা ভাল জিওর এই অফারগুলি? কতটাই বা সত্যি মুকেশ অম্বানির ডেটা সংক্রান্ত দাবি? জিওর কয়েকটি দাবির দিকে একবার নজর দেওয়া যাক।
১) ডেটা ইউজারদের একেবারে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ জিও। তাদের দাবি জিবি প্রতি মোটামুটি ৫০ টাকা খরচ হবে। রিলায়্যান্স যেটা বলছে না, সেটা হল এই সুবিধা পাওয়া যাবে শুধুমাত্র মাসিক ৪,৯৯৯ টাকার প্যাকের ক্ষেত্রেই। ওই প্যাকে ৭৫ জিবি ডেটা পাওয়া যাবে। হিসাবে যা মোটামুটি ৫০ টাকা প্রতি জিবি। ৪৯৯ টাকার সাধারণ ট্যারিফের ক্ষেত্রে কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪ জিবি। হিসাবে যা মোটামুটি ১০০ টাকা প্রতি জিবি। আর দৈনিক ১৯ টাকা প্যাকে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১০০ এমবি। হিসাবে যা মোটামুটি ১৯০ টাকা প্রতি জিবি।
২) একেবারে প্রাথমিক স্তরে জিও দিচ্ছে ১৪৯ টাকা প্রতি মাসের অফার। এ ক্ষেত্রে ভয়েজ কল একেবারে ফ্রি থাকলেও ডেটা পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩০০ এমবি। ‘ডেটাগিরি’র জন্য যা খুবই কম। যে সমস্ত ইউজার ডেটা ব্যবহার করেন বেশি, তাঁদের কাছে ৩০০ এমবি খুবই কম। অর্থাত্ এই প্ল্যান ডেটা ব্যবহারকারীদের জন্য খুব একটা কাজের নয়।
৩) দৈনিক ১৯ টাকার ছোটা প্যাককে জিও বলছে বৈপ্লবিক। কিন্তু এটা কি আদৌ তেমন কিছু? ১৯ টাকার এই প্ল্যান কার্যকর মাত্র ২৪ ঘণ্টার জন্য। এয়ারটেল বা ভোডাফোনের কিন্তু এর থেকেও কম পয়সায় রিচার্জের ব্যবস্থা আছে। ২৪ টাকায় আইডিয়া এবং এয়ারটেলের ১০০ এমবি ৪জি ডেটা পাওয়া যায় যা তিন দিন ব্যবহার করা যায়।
৪) আগেই দেখা গেল ১৪৯ টাকার প্ল্যান ব্যাপক ডেটা ইউজারদের জন্য ভাল নয়। পরবর্তী প্ল্যান ৪৯৯-এ পাওয়া যাচ্ছে ৪ জিবি ডেটা। ১৪৯ এর প্ল্যানের সঙ্গে যার পার্থক্য শুধু অতিরিক্ত ৩.৭ জিবি ডেটায়। অর্থাত ইউজার ৩.৭ জিবি ডেটা বেশি পাচ্ছে অতিরিক্ত ৩৫০ টাকার বিনিময়ে। বাজারে কিন্তু ১০ জিবি পর্যন্ত ডেটা পাওয়া যায় আর ৫০ টাকা বেশি দিলেই। তবে সেটা অবশ্য ৩জি।
৫) পরবর্তী প্ল্যান ৯৯৯ টাকার। এ ক্ষেত্রে পাওয়া যাচ্ছে ১০ জিবি ডেটা। অর্থাত ৯.৭ জিবি অতিরিক্ত ডেটার জন্য খরচ হচ্ছে ৮৫০ টাকা। খুব আকর্ষণীয় অফার কি? আর সামান্য বেশি টাকা দিলেই কিন্তু গ্রাহক বিএসএনএলের আনলিমিটেড ৩জি পরিষেবা পাচ্ছেন। ১০ জিবির ৪জি নেওয়ার চেয়ে ১০০ টাকা বেশি দিয়ে আনলিমিটেড ৩জি নেওয়া কি খুব খারাপ? গ্রাহক বিচার করবেন।
জিওর যেটা সবচেয়ে কার্যকরী অফার সেটা হল বিনামূল্যে ভয়েজ কলের সুবিধা। এই অফার নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী। কিন্তু একেবারে নীচের দিকের ব্যবহারকারীরা কি খুব বেশি ভয়েজ কল করেন? আমাদের চারপাশে আমরা যে সবজি বিক্রেতা বা মিস্ত্রি বা ট্যাক্সি চালকদের দেখি, তাঁরা কিন্তু কল রিসিভ করেন বেশি। আর ব্যবহার করেন ২০-৩০ টাকার মতো ছোট রিচার্জ। তাঁদের প্রয়োজন কিন্তু মাসে ১৪৯ টাকার চেয়ে বেশ কম। আর জিওর ১৪৯-এর প্ল্যান কিন্তু ২৮ দিনের।
একমাত্র যাঁরা দিনের বেশির ভাগ সময়ে লম্বা কল করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেই এই প্ল্যান দুর্দান্ত। সে ক্ষেত্রে জিও-র ‘ডেটাগিরি’ হল কই? আজকের জেন ওয়াই কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ, গুগলেই দিন কাটায়। কথা বলার চেয়ে ডেটার প্রয়োজন তাঁদের বেশি। কিন্তু জিওর অফারে কি ডেটা ইউজারদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা থাকছে? ইন্টারনেটের যুগে জিও কি গ্রাহকদের আবার অ্যানালগের যুগে ফিরিয়ে দিচ্ছে না? স্থির করবেন গ্রাহক।
No comments:
Post a Comment