কলকাতার বউবাজারে ভীম চন্দ্র নাগের মিষ্টির দোকানটি বিখ্যাত৷ মিষ্টি
খাওয়ার লোভে ওই দোকানে অনেকেই যান৷ এই
সেই দোকান যেখানে বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাঁর জুড়িগাড়ি থামিয়ে প্রতিদিন
একসের করে সন্দেশ শালপাতার চ্যাঙারী ভর্তি করে বাড়ি নিয়ে যেতেন।
... তবে সেখানে গেলে চোখে পড়বে একটি বিরল
ঘড়ি৷ টার ডালায়গুলো লেখা রয়েছে বাংলায়৷ অমন ঘড়ি ঘিরে রয়েছে এক
ইতিহাস৷
ওই দোকানে একবার মিষ্টি খেতে এসেছিলেন বিখ্যাত ঘড়ি কোম্পানি ‘কুক অ্যান্ড
কেলভি’-র বড়সাহেব। ভীম চন্দ্র নাগের মিষ্টি খেয়ে একেবারে মোহিত হলেন
তিনি৷ তখনই ওই সাহেব জানতে চাইলেন, এত ভাল মিষ্টি বানাও এমন বড় দোকানে
কোনও ঘড়ি নেই কেন? তখন কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন ভীম নাগ৷ কিছুটা লজ্জিত
হয়ে বলেছিলেন ঘড়ি কেনা হয়ে ওঠেনি৷ তা শুনে সাহেব জানিয়েছিলেন তিনি
খুশি হয়ে এই দোকানে একটা দেওয়ার ঘড়ি উপহার দেবেন৷তখন নাগমশাই
জানিয়েছিলেন তার কর্মচারিরা ইংরেজি পড়তে পারেন না৷ তাই অনুরোধ করেন যদি
সেক্ষেত্রে বাংলায় লেখা ঘড়ি হয় তাহলে কর্মচারিদের সুবিধা হয়৷সেদিন
মিস্টি খেয়ে এতটাই খুশি ছিলেন সাহেব যে তারও ব্যবস্থা হবে বলে জানিয়ে
দেন৷সেইমতো লন্ডন থেকে বাংলা হরফে লেখা ডায়াল তৈরি হয়ে আসে৷ সাহেবি
পেইন্টারের আড়ষ্ট হাতে লেখা হয়েছিল ওই বাংলায় ডায়াল৷সেই ঘড়ি এখনও শোভা
পাচ্ছে ভীম নাগের দোকানে৷ ওই ঘড়ির মাঝখানে কুক অ্যান্ড কেলভি-র নামটাও
বাংলাতেই লেখা, নীচে লেখা লন্ডন।
.. প্রসঙ্গত, কুক অ্যান্ড কেলভি অব লন্ডনের শুরুটা কিন্তু কলকাতা শহরেই ছিল।
১৮৫৮ সালে রবার্ট টমাস কুক এবং চার্লস কেলভি কোম্পানিটার পত্তন করেন।
“ওয়াচ, ক্লক অ্যান্ড ক্রোনোমিটারস মেকার টু হিজ এক্সেলেন্সি দ্য ভাইসরয়
অ্যান্ড গভর্নর জেনারেল অব ইন্ডিয়া”। ঘড়ির কেস আর ডায়াল তৈরি হয়ে আসত লন্ডন
থেকে। মুভমেন্ট অবশ্যই সুইস। ইংলন্ড, ফ্রান্স, জার্মানি আর সুইজারল্যান্ডে
তখন একের পর এক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছেন ঘড়ি নির্মাতারা।
No comments:
Post a Comment